- লেখকঃ সাইফুল রনি
বিশেষ অংশ: তারা বিজ্ঞানের কথা বলে, অথচ তারাও কিন্তু সেই একই বিশ্বাস মনে
ধারনা করে বসে আছে যে, বিজ্ঞান একদিন এ ব্যাপারে প্রমান দিবে, অথচ
বিশ্বাসী’রা বিশ্বাস করলে তখনই তা অজ্ঞতা হয়ে যায়। বাস্তবতা হচ্ছে, তারাও
জানে বিজ্ঞান কখনো এর উত্তর দিতে পারবেনা, কারন মহাবিশ্ব সৃষ্টি’র
কার্যকারন জানতে হলে আপনাকে এর অস্তিত্বের পূর্বাবস্থায় অর্থাৎ বিগ ব্যাং
এর আগের অবস্থায় যেতে হবে। এখন, এটা কি কখনো সম্ভব? আপনি, যতই চেষ্টা
করুন, সেরকম পরিবেশ সৃষ্টি করার, তারপরও সেটি এখনকার বিগ ব্যাং এর মিলিয়ন
বছর পরের পরিবেশ বৈ আর কিছুই না। তারপরও তারা ঐ অন্ধ বিশ্বাস মনে ধারন করে
আছে।
পূর্ণ আলোচনা:
আসসালামুআলাইকুম,
আমি আশা করি আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও বিশ্বাসী। তারপরও দেখা যাচ্ছে, নাস্তিকতা দিনে দিনে খুবই জনপ্রিয় একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং অধিকাংশ সময় তা ফ্যাশন হিসেবেই পরিলক্ষিত হয়।( ফ্যাশনের ধারনাটি শ্রদ্ধেয় দেবব্রত ভাইয়ের থেকে ধার করা, যেটা আমি আসলে জানতাম না যে, এটাও যে একটা ফ্যাশন হতে পারে)। আবার দেখা যায়, অনেকের স্রষ্টায় বিশ্বাসও খুবই নড়বড়ে, চারপাশের এই বিশৃংখল অবস্থা দেখে। তাই এসব চিন্তা করেই এই পোস্ট।
আর একটি বিষয় বলা দরকার, শুধুমাত্র এই
যুক্তির ভিত্তিতে কিন্তু আমরা মুসলমানেরা আমাদের বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত
করিনি। বরং আরো অনেক নিদর্শন, প্রমান ইত্যাদি রয়েছে আল্লাহ’র অস্তিত্বে
বিশ্বাসের। তবে, এগুলোও সহায়ক।মৌলিক বিষয় থেকেই শুরু করা যাক। প্রথমত
আমাদেরকে অবশ্যই সকল বিষয়ে যৌক্তিক এবং ন্যায়সংগত হতে হবে। যেমন, আমাদের
পূর্ব-অভিজ্ঞতা, প্রমান এবং কমন সেন্স কাজে লাগাতে হবে।এখন, বাস্তবতা
হচ্ছে, কোন কিছু প্রমান করার ক্ষেত্রে আমরা খুবই সীমাবদ্ধ। যেমন, কেউ যদি
আপনাকে বলে যে, প্রমান কর, তুমি কোন উন্মাদ একজন বিজ্ঞানী’র টেবিলে রাখা
কোন মস্তিষ্ক নও, যেখানে বিজ্ঞানীটি তোমার মস্তিস্কের বিভিন্ন জায়গায়
ইলেকট্রড দিয়ে খোঁচা দিচ্ছে আর তোমার কান্ড-কারখানা দেখে হাসছে।
এটা
কি কেউ প্রমান করতে পারবেন? না। মূল কথা হচ্ছে, আমরা আমাদের জীবন এরকম
অসম্ভব জিনিসকে সম্ভব ধরে নিয়ে যাপন করিনা। বরং আমরা আমাদের চারপাশের এই
জগৎটাকে যেভাবে দেখি, যেভাবে আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জন করি, সেভাবেই যুক্তির
ক্ষেত্রে তা কাজে লাগাই। আমরা সবসময়ই সহজ ব্যাখ্যা’র পথে যাই।এখন, আপনাকে
একটা প্রশ্ন করি, আমার লেখা’র এই মন্তব্যের ঘরে যদি একজন মন্তব্য করে আর
আমি তার উত্তর দিতে থাকি, তবে কখনো কি আমাদের কারো পক্ষে ইনফিনিটি সংখ্যক
মন্তব্যের ঘর স্পর্শ করা সম্ভব? না। কারন, একজনের মন্তব্যের জবাবে আরেকজন
ঠিকই পাল্টা মন্তব্য দিয়ে দিবে।আবার, যদি বলি, একজন মহিলা তার নিজেকে জন্ম
দিয়েছে, তবে কি বিশ্বাস করবেন? আপনি নিশ্চয়ই মনে মনে আমাকে নিয়ে
হাসছেন। ( এর ব্রেইনের সাইজ মনে হয় অনেক ছোট!)। অর্থাৎ এটা সম্ভব না।
অথবা, যদি বলি আমার এক বন্ধু প্রেগনেন্ট, তবে অবশ্যই আপনার মাথায় একজন
মহিলার কথাই মনে আসবে, নিশ্চয়ই কোন পুরুষের কথা না।
আবার, যদি বলি,
আপনার গ্রেট গ্রেট গ্রেট গ্রেট ….পূর্ব-পুরুষের সন্তান ছিল, তবে নিশ্চয়ই
আপনাকে তা স্বীকার করতেই হবে, অন্তত একজন সন্তান হলেও ছিল, তা না হলে আপনি
নিজেই এখানে থাকতেন না। এটা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন।
এখন, উপরোল্লিখিত ফ্যাক্টগুলো মাথায় নিয়ে, যদি আমরা এই মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তা করি, তবে কি পাই। দুইটি অপশন, ১। এই মহাবিশ্ব যেখানে আছে সেখানে সবসময়ই ছিল। অথবা, ২। ছিল না।এখন, আমরা যদি বলি, এই মহাবিশ্ব সবসময়ই এখানে ছিল এবং আছে, যেমনটা বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছিল, এর মানে তবে দাঁড়ায় যে, এই মহাবিশ্বের ইনফিনিটি সংখ্যক ইতিহাস রয়েছে। অর্থাৎ মহাবিশ্বের ইতিহাসে সবসময় প্রত্যেক ঘটনার আগে একটা করে ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেটা কি সম্ভব? আমরা আগেই এই পোস্টের মন্তব্যের উদাহরন দিয়ে তা প্রমান করেছি যে, ইনফিনিটি নাম্বার বাস্তব জীবনে সম্ভব নয়, সেটা শুধুমাত্র একটি তত্ত্বগত ধারনা। আপনি একটা খুবই বড় সংখ্যা ধারনা করতে পারেন, কিন্তু ইনফিনিটি সংখ্যক কখনোই নয়। তাই, এই মহাবিশ্বের রয়েছে ইনফিনিটি সংখ্যক ইতিহাস, এই ধারনা’র কোন যৌক্তিক ভিত্তিই নেই এবং এটা একটি বোধহীন ধারনা।
এখন, উপরোল্লিখিত ফ্যাক্টগুলো মাথায় নিয়ে, যদি আমরা এই মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তা করি, তবে কি পাই। দুইটি অপশন, ১। এই মহাবিশ্ব যেখানে আছে সেখানে সবসময়ই ছিল। অথবা, ২। ছিল না।এখন, আমরা যদি বলি, এই মহাবিশ্ব সবসময়ই এখানে ছিল এবং আছে, যেমনটা বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছিল, এর মানে তবে দাঁড়ায় যে, এই মহাবিশ্বের ইনফিনিটি সংখ্যক ইতিহাস রয়েছে। অর্থাৎ মহাবিশ্বের ইতিহাসে সবসময় প্রত্যেক ঘটনার আগে একটা করে ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেটা কি সম্ভব? আমরা আগেই এই পোস্টের মন্তব্যের উদাহরন দিয়ে তা প্রমান করেছি যে, ইনফিনিটি নাম্বার বাস্তব জীবনে সম্ভব নয়, সেটা শুধুমাত্র একটি তত্ত্বগত ধারনা। আপনি একটা খুবই বড় সংখ্যা ধারনা করতে পারেন, কিন্তু ইনফিনিটি সংখ্যক কখনোই নয়। তাই, এই মহাবিশ্বের রয়েছে ইনফিনিটি সংখ্যক ইতিহাস, এই ধারনা’র কোন যৌক্তিক ভিত্তিই নেই এবং এটা একটি বোধহীন ধারনা।
সুতরাং, আমরা ধরে নিতে পারি,
এই মহাবিশ্ব কোন একসময় অস্তিত্ব লাভ করেছিল, অর্থাৎ শুরু হয়েছিল। এখন,
যেহেতু, মহাবিশ্ব কোন একসময় শুরু হয়েছিল এটা প্রমানিত, ( যা বিগ ব্যাংগ
থিউরী দ্বারাও প্রমানিত) তখন আরো দুইটি মৌলিক প্রশ্ন এসে যায়। ১। এটা
নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছিল। অথবা, ২। বাইরের কোন কিছু তাকে সৃষ্টি
করেছিল।এখন, আমরা যদি বলি যে, এই মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে, তবে
এর মানে হচ্ছে মহাবিশ্বের অস্তিত্ব এর আগে থেকেই ছিল এই সৃষ্টিকর্ম করার
জন্য এবং একই সাথে ছিল না, কারন এটা তো এখনো সৃষ্ট হয়নি। এটা ঠিক আগের
উল্লিখিত একজন মহিলার নিজেকে নিজে জন্ম দেওয়ার সাথে মিলে যায়, যা
পুরোপুরি পাগলের প্রলাপ। আসলে, সত্যি কথা বলতে, এই মহাবিশ্বের কোন কিছুরই
সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই। বরং ম্যাটার অথবা এনার্জী’র শুধুমাত্র রূপান্তর
ঘটে।সুতরাং, এই সহজ যুক্তি থেকে এটা প্রমানিত যে, এই পুরো মহাবিশ্বের একজন
এক্সটারনাল/বাহ্যিক স্রষ্টা রয়েছে। এটাই একমাত্র যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত,
বিশ্বাসযোগ্য উত্তর, এই মৌলিক প্রশ্নের।
এখন, অনেকে প্রশ্ন তুলতে
পারেন, কিন্তু ‘বিজ্ঞান তো এখনও তা প্রমান করেনি’। যারা এ প্রশ্ন তোলেন
তারা অত্যন্ত সহজ একটি জিনিস ভুলে যান যে, বিজ্ঞান শুধুমাত্র তার
আয়ত্বাধীন বিষয়গুলো নিয়েই গবেষনা করতে পারে। বিজ্ঞান কখনোই বিগ ব্যাং এর
আগে কি হয়েছিল তা বলতে পারবেনা, কারন তা বিজ্ঞানের সীমার বাইরে। তাছাড়া,
বিজ্ঞানই কিন্তু সত্যকে জানার একমাত্র পথ নয়। (এ বিষয়টি খুবই
গুরুত্বপূর্ন। আশা করি সবাই বিষয়টি নিয়ে যার যার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান
অনুসারে চিন্তা করবেন।) আপনি অতি সহজেই আমার প্রেগনেন্ট বন্ধুকে মেয়ে
হিসেবে ধরে নিচ্ছেন, অথচ তার কোন ডি.এন.এ টেস্ট করলেন না, বা তাকে আপনি
চিনেন না এমনকি তাকে কখনো দেখেননি, কিন্তু তারপরও আপনি আপনার এই সিদ্ধান্তে
সন্তুষ্ট। ঠিক তেমনি, আপনার পূর্বপুরুষদের বেলায়ও, আপনি তাদের ব্যাপারে
কিছুই জানেন না, অথচ তাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করছেন।
একইভাবে, বিজ্ঞানে’র একটি প্রতিষ্ঠিত মতবাদ হচ্ছে, যা কিছুই অস্তিত্ব লাভ করেছে, তার পেছনে একটি কার্যকরন রয়েছে।( The Law of cause and effect). এখন, যেহেতু এই মহাবিশ্বও সৃষ্টির মাধ্যমে শুরু হয়েছে, তাই এটা খুবই যৌক্তিক যে, এর পেছনেও একটি কারন রয়েছে, এবং সেটাকেই আমরা বলি স্রষ্টা।
একইভাবে, বিজ্ঞানে’র একটি প্রতিষ্ঠিত মতবাদ হচ্ছে, যা কিছুই অস্তিত্ব লাভ করেছে, তার পেছনে একটি কার্যকরন রয়েছে।( The Law of cause and effect). এখন, যেহেতু এই মহাবিশ্বও সৃষ্টির মাধ্যমে শুরু হয়েছে, তাই এটা খুবই যৌক্তিক যে, এর পেছনেও একটি কারন রয়েছে, এবং সেটাকেই আমরা বলি স্রষ্টা।
( দয়া করে,
কেউ এখন শিশুসুলভ প্রশ্ন করে বসবেন না যে, তবে স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করল।
তবে এর উত্তর বা ব্যাখ্যা ইনশাল্লাহ পরে কোন এক পোস্টে দেওয়ার চেষ্টা করব।
সংক্ষেপে: স্রষ্টা তার সংজ্ঞায়ই অসৃষ্ট।)তাই, স্রষ্টা’য় বিশ্বাস হচ্ছে
সবকিছুর সবচেয়ে প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা এবং আমাদের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানের সাথে
সামঞ্জস্যপূর্ন। স্রষ্টা’র অস্তিত্বে অবিশ্বাস মানুষকে মহাবিশ্বের
সৃষ্টিরহস্যে দৈব ঘটনা’র আশ্রয় নেওয়ায়। তারা বিজ্ঞানের কথা বলে, অথচ
তারাও কিন্তু সেই একই বিশ্বাস মনে ধারনা করে বসে আছে যে, বিজ্ঞান একদিন এ
ব্যাপারে প্রমান দিবে, অথচ বিশ্বাসী’রা বিশ্বাস করলে তখনই তা অজ্ঞতা হয়ে
যায়। বাস্তবতা হচ্ছে, তারাও জানে বিজ্ঞান কখনো এর উত্তর দিতে পারবেনা,
কারন মহাবিশ্ব সৃষ্টি’র কার্যকারন জানতে হলে আপনাকে এর অস্তিত্বের
পূর্বাবস্থায় অর্থাৎ বিগ ব্যাং এর আগের অবস্থায় যেতে হবে। এখন, এটা কি
কখনো সম্ভব? আপনি, যতই চেষ্টা করুন, সেরকম পরিবেশ সৃষ্টি করার, তারপরও সেটি
এখনকার বিগ ব্যাং এর মিলিয়ন বছর পরের পরিবেশ বৈ আর কিছুই না। তারপরও তারা
ঐ অন্ধ বিশ্বাস মনে ধারন করে আছে।
এ ব্যাপারে ফেসবুকের একটা
স্ট্যাটাস আপনাদের সাথে শেয়ার করছি: ”Atheists are cute, they talk so
much about proof and evidence but when you talk about their beliefs they
just say “we do not know but science will find out one day”. Atheist is
just another religion build on blind faith with the illusion of being
logical.”
শেষ করার আগে কোরান থেকে একটি আয়াত: “নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তা’ আলা আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে।” (২-১৬৪)।
শেষ করার আগে কোরান থেকে একটি আয়াত: “নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তা’ আলা আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে।” (২-১৬৪)।
Inspired by A.R.Green’s book Man in the red underpant, Hamza Tzortzis, Jamshed Javed.
Source: http://pchelplinebd.com