Wednesday, March 6, 2013

নিজের মতবাদের দুর্বলতা সম্পর্কে ডারউইনের স্বীকারোক্তি

১৮৫৯ সালে ডারউইন তার The Origin of Species by Means of Natural Selection বইটি  প্রকাশ করে। তিনি এই বইয়ে বিবর্তনের মাধ্যমে প্রজাতির উৎপত্তির ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বইয়ে বিজ্ঞানসম্মত কোন প্রমাণ উপস্থাপন করার কোন সুযোগ তার ছিল না। তখনো কোষ আবিষ্কৃত হয়নি। সব ধরণের পরীক্ষণ চালাতো হতো আদিম অণুবীক্ষণ যন্ত্রে। প্রকৃতপক্ষেই, এ কারণেই তার পুরো বই জুড়েই পেশাদারিত্বের অভাব লক্ষ করা যায় এছাড়াও এমনসব সিদ্ধান্ত যার ভিত্তি  পরীক্ষণের বদলে ধারণা ও অনুমান।
পরবর্তিতে ডারউইন তার The Descent of Man  বইতেও একই রকম বৈজ্ঞানিক ধারণার অবতারণা করেন। দু’ বইতেই তিনি তার থিওরির দুর্বলতা ও অসংলগ্নতা স্বীকার করে নিয়ে থিওরিটির বাস্তবে সত্যে পরিণত হবার ব্যাপারে বইজুড়ে বার বার  সন্দেহ পোষণ করেন।
ব্রিটিশ শারীরবিদ এইচ এস লিপসনডারউইনের এ আশঙ্কা সম্পর্কে মন্তব্য করেন-
“ডারউইনের অরিজিন অব স্পিসিসি পড়ে আমি দেখলাম ডারেইনকে যেভাবে দেখানো হয় তিনি নিজে তার     চেয়ে অনেক কম নিশ্চিত ছিলেন। যেমন,  ‘থিওরির দুর্বলতা’ (Difficulties of the Theory) শীর্ষক অধ্যায়টি লক্ষণীয়   রকম আত্ম-সংশয়ের নিদর্শন। বিশেষ করে,  একজন শারীরতাত্বিক হিসেবে, চোখের উৎপত্তি সম্পর্কে তার মন্তব্য আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।”
ডারউইন এ ধরণের স্বীকারোক্তি আরো দিয়েছেন যেগুলো পরবর্তীতে তার ছেলে ফ্রাঙ্কিস ডারউইন এর সম্পাদনায়  Life and Letters of Charles Darwin নামে সংগৃহীত হয়েছে। ডারউইনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও তৎকালীন বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের কাছে লিখিত এসব চিঠি তার থিওরির ব্যাপারে স্বীকারোক্তিতে ভরপুর। সংশ্লিষ্ট জ্ঞানের শাখায় নিজের অজ্ঞতা প্রকাশে তার কোন জড়তা ছিল না।
ডারউইনের বক্তব্যগুলো::
আমার বইয়ের এই অংশে আসার অনেক আগেই অনেকগুলো দুর্বলতা পাঠকের সামনে আসবে। তাদের কিছু কিছু এতই মারাত্মক যে আমি এগুলো নিয়ে চিন্তা করতেও অস্বস্তিতে পড়ে যাই।
তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যার প্রফেসর Asa Gray এর কাছে লিখিত চিঠিতে তিনি বলেন
“আমি ভালো করেই জানি আমার অনুমান সত্যিকার বিজ্ঞানের চৌহদ্দির বেশ বাইরে”
E. Haeckel এর কাছে  লেখা চিঠিতে বলেন-
     “পরবর্তী ধাপসমূহে ‘অপ্রয়োজনীয় কাঠামোর বিলোপ’ বিষয়ক সমস্যাটি কি তোমাকে হতবুদ্ধি করেছে? …এ সমস্যাটি আমাকে এখনো বিমূঢ় করে রেখেছে।”
তার বন্ধু ও বিজ্ঞানী Sir Joseph Dalton Hooker এর কাছে লিখিত চিঠিতে-
          “মাঝেমাঝেই আমি সন্দেহে পড়ি যে শেষপর্যন্ত আমি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হব।…
    কখনো কখনো আমি কল্পনায় দেখি আমি আমার থিওরির দুর্বলতাগুলো দূর করেছি। কিন্তু ঈশ্বর জানেন, এটা বোধহয় অলীক চিন্তাই। …”
  ..তুমি বইট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছো, আর আমি শুধু বলতি পারি আমি আত্মহত্যার জন্যে প্রস্তুত আছি। আমি মনে করতাম এটা ঠিকভাবেই লেখা হয়েছিল, কিন্তু নতুন করে লেখার জন্যে অনেকগুলো অভাব দেখতে পাচিছ। ”
ব্রিটিশ ভূতাত্বিক Charles Lyell এর কাছে লেখায়-
“এত দূর্বোধ্য সমস্যার আলোচনা করার ভানও আমি করতে পারছি না। সবকিছুর উৎপত্তির রহস্য আমরা সমাধান করতে পারবো না। ”
ডারউইন দেখলেন যে তার থিওরির বিরুদ্ধে সবচেয়ে জোরালোভাবে দাঁড়াচ্ছে অবস্থান্তর আকৃতি (transitional forms বা প্রজাতি থেকে প্রজাতিতে রুপান্তরের ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী গঠন) এর অভাব। তাই তিনি ১৮৫৯ সালে তার অরিজিন অব স্পিসিস বইয়ের “থিওরির দুর্বলতা” অধ্যায়ে বলেন-
”যদি প্রজাতিসমূহ অচেতন ক্রমবিন্যাসের মাধ্যমে অন্য প্রজাতি থেকেই এসে থাকে, তাহলে কেন আমরা সর্বত্র অসংখ্য অবস্থান্তর আকৃতি দেখি না? …,যেহেতু এই থিওরির মতে অগণিত অবস্থান্তর আকৃতির অস্তিত্ব থাকা প্রয়োজন, তাহলে কেন আমরা সেগুলোকে অগণিত সংখ্যায় ভূত্বকে খুঁজে পাই না?……কেন তাহলে প্রত্যেক ভূতাত্বিক বিন্যাস (Formation)  ও প্রত্যেক শিলাস্তর এমন মধ্যবর্তী আকৃতিতে (Transitional Form) ভর্তি নয়?……ভূতত্ব নিশ্চিতভাবেই এমন সূক্ষভাবে ক্রমবিকশিত অঙ্গাণু দেখাতে পারেনি এবং এটাই সম্ভবত আমার থিওরির বিরুদ্ধে সবচেয় সুস্পষ্ট  ও জোরালো আপত্তি।”



No comments:

Post a Comment