Monday, February 4, 2013

নাস্তিকদের কাছে প্রশ্ন : প্রকৃতির কি ইন্টেলিজেন্স আছে ?

নাস্তিকদের কাছে প্রশ্ন : প্রকৃতির কি ইন্টেলিজেন্স আছে ?

 

বিশ্বাসীদের মতে সৃষ্টিকর্তা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।
অবিশ্বাসীদের মতে প্রকৃতি সৃষ্টি করেছে সবকিছু।
বিশ্বাসীদের মতে সবকিছু সৃষ্টিকর্তার ডিজাইনড এবং অরিয়েন্টেড।
অবিশ্বাসীদের মতে বিবর্তনবাদ।

আস্তিকদের সাথে অনেক কথা বলা হয়েছে।
নাস্তিকদের সাথে একটু কথা বলতে চাই এবার।
প্রকৃতির কি ইন্টেলিজেন্স আছে ?

তারাও বলবেন - প্রকৃতির কোন ইন্টিলিজেন্স নাই ।   তাহলে কিভাবে এই জড় প্রকৃতি কিভাবে সককিছু সৃষ্টি করতে পারে?


সাময়িক পোস্ট ।
মূল পোস্ট লিখার জন্য প্লট হিসেবে এই পোস্ট করলাম।  

 

Source: http://www.somewhereinblog.net

Sunday, February 3, 2013

নাস্তিক মতবাদ! নাকি ধর্ম বিরোধীতা?

নাস্তিক মতবাদ! নাকি ধর্ম বিরোধীতা?

লিখেছেনঃ তীর্যক নীল

লগে ইদানিং নাস্তিকতা একটা ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। কারণটাও একদমই সস্তা দরের। কোন ব্লগার হয়তো মাসের পর মাস লিখে চলেছেন, নিজে নিজে তিনি একজন বিখ্যাত ব্লগার, কিন্তু কেউ তাকে চিনেও না জানেও না। ভাল উন্নতমানের লেখা লিখে চলেছেন একের পর এক, কিন্তু কেউ কোন মন্তব্য লিখেনা। তবে ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করে অথবা নাস্তিকতা টপিকটি ব্যবহার করলেই সকল ব্লগার একদম হুমড়ি খেয়ে পড়েন, কেউ বুঝে, আবার কেউ না বুঝে। ব্যাস, মহুর্তের মধ্যেই সুপার হিট ব্লগার। এই ধরণের সস্তা মন-মানসিকতার ধারকগণই মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে এই কুপথটি বেছে নিয়ে থাকেন। এদের লেখার মান বিবেচনা করলেই খুব সহজে বুঝা যায় এদের জ্ঞানের দৌড়। কিতাব যাদের ওস্তাদ, জাতীয়ভাবে স্বীকৃত কুলাঙ্গার যাদের গুরু, তারাই দু’একটা তথাকথিত বই পড়ে আর দু’একজন ওস্তাদ কুলাঙ্গারের সাথে উঠ্‌বস্‌ করে, দু’চারটি খোড়া যুক্তি শিখে মহা পণ্ডিত বনে যান। এদের বয়কট করাটাই সকল বিশ্বাসী ব্লগারের অবশ্য কর্তব্য। এইসব সস্তা দরের লেখায় কোন মন্তব্য লেখা, উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর সামিল। প্রভুভক্ত কুকুরের মতো কোন কিছু না বুঝেই যারা বাহ্বা জানিয়ে মন্তব্য লিখে যান, অথবা শুধু শুধুই তাদের বিরুদ্ধে আগড়ম বাগড়ম মন্তব্য লিখে যারা গর্জে উঠেন, তাদের দৌড় সম্পর্কেও আমি সন্ধিহান। আপনার যদি এতো ভাল জ্ঞান থেকেই থাকে, তাহলে এদের লেখায় কোন মন্তব্য না লিখে, প্রতিউত্তর হিসাবে আপনি কেন একটি সুন্দর পোষ্ট লিখতে পারেন না? কেন শুধূ শুধু এদের লেখায় মন্তব্যের কলেবর বাড়িয়ে এদেরকে জনপ্রিয় করে তুলেন?

অনেক বুদ্ধিমান বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে নাস্তিকতা বিষয়ে ছবক দেন, কিন্তু তিনি আবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়েন। এটা আসলে অনেকটা দুই হাত ভরে ঘুষ খাওয়া, আবার নামাজও পড়ার মতো ইয়ার্কি আরকি। কেন জানি আমাদের সমাজে এই শ্রেণীর লোকই বেশি। এটা আসলে ইন্টেলেকচুয়াল ডিজঅনেস্টি।
নাস্তিকতা আসলে পুরাটাই ভুয়া একটি ফ্যাশন, এটা এখন প্রমাণিত সত্য। এটা সবাই বুঝে। কিন্তু যুক্তি-তর্ক দিয়ে তাদের মোকাবেলা করার মতো সাহস হয়ে উঠেনা অনেকেরই। ব্লগে নাস্তিকতা মতবাদের পক্ষে কেউ কোন কিছু লিখলে, সবাই রেগে গিয়ে খিস্তি-খেউর আউড়াতে থাকে। এতে নাস্তিকরা আরো মজা পেয়ে যায়। অনেকটা ঐ গল্পের মতো যে- এক দেহপসারিনী বুড়ি হয়ে গেলে সে আর কোন খদ্দের পায়না। ধীরে ধীরে তাকে আর বাজে ভাষায় কিছু বলে গালিও দেয়না। এসব গালি না শুনলে তার আবার ঘুম আসতে চায়না। তো সে কি করল, প্রতি রাতে রাস্তায় অন্যায় করে রাখে, আর সকাল বেলা রাস্তা দিয়ে কেউ যাওয়ার সময় অন্যায় দেখে ইচ্ছে মতো গালি-গালাজ করে। এতেই সে মহানন্দ পায়। তাই সে প্রতিদিনই এই কাজটিই করে চলে। তার ঘুমও ভাল হয়।
ঐসব তথাকথিত নাস্তিকদের প্রতি আমার প্রশ্নঃ আপনি কি চাকুরী করেন? বিসিএস বা এজাতীয় কোন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন? যদি করে থাকেন তাহলে, সেখানে আপনার ধর্মীয় পরিচয় কি মুসলিম লিখেছেন? হিন্দু লিখেছেন? নাকি নাস্তিক? চাকুরীর ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন। যদি মুসলিম বা হিন্দু লিখে থাকেন, তাহলে বলতে হয়, আপনি আপনার নিজের সাথে এখনও প্রতারণা করে চলেছেন। আর যদি নাস্তিক লিখে থাকেন তাহলে তার প্রমাণ তুলে ধরবেন, আশা করি। এখানে আপনি জবাবে হয়তো বলবেন- নাস্তিকতা লেখার রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি ঐ ক্ষেত্রে নাই, তাই লিখতে পারিনা।
কোন খানে আছে শুনি? যেখানে আছে সেখানে চলে যান, ভাল থাকবেন।
নাস্তিকগণ বলে থাকেন- তারা কোন ধর্মে বিশ্বাসী নন। কোন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী নন। কোন অহীতে বিশ্বাসী নন। আমার কথা- এই যে আপনারা কোন কিছুতে বিশ্বাসী নন, এটাই তো আপনাদের একটা বিশ্বাস। এটাই তো আপনাদের একটা ধর্ম, একটা মতবাদ। তাহলে আপনারা কোন ধর্মে বিশ্বাসী নন, সেটা কি করে বলেন? আপনারা আপনাদের এই ধর্মটাকে আকড়ে ধরে রাখুন না, কেন খামোখা অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাতুকুতু দিতে যান? তাহলে কি আপনি রাতারাতি বিখ্যাত হওয়ার নীচু মনমানসিকতার পরিচায়ক নন?
মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া এই ধরণের তথাকথিত নাস্তিকের সংখাই বাংলাদেশে বেশি লক্ষ্য করা যায়। সেই নাস্তিকদের উদ্যেশ্যে বলি- একটা সময় আপনার মনের ভিতর অসংখ্য প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি মারতে থাকে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে, যেগুলো আপনার কাছে নিতান্তই কুসংস্কার বলে মনে হতে থাকে। আপনি শত গবেষনা করেও তার সঠিক জবাব বের করতে পারেননি। জবাব জানার জন্যে দৌড়ে গেছেন কোন কাঠমোল্লার কাছে। তিনি আমতা আমতা করে তোতা পাখির মতো কিছু মুখস্ত বুলি আউরে দিল, কিন্তু আপনি তাতে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। কেউ আপনাকে সঠিক জবাব দিতে পারেনি। ধীরে ধীরে শুধু এর ক্ষতিকারক দিকগুলোই আপনার কাছে প্রকাশিত হতে থাকে। আর তাই আপনাকে ইসলাম বিদ্বেষী হয়ে উঠতে প্রভাবক হিসাবে সহায়তা করে আপনার চিন্তা ধারা। এটা যদি হয়ে থাকে, তাহলে এতে আপনার জ্ঞানের দৈন্য দশাই প্রকাশিত হয়েছে মাত্র। কেমন করে? তার জবাব দিচ্ছি একটু পরে।
কোরআন এমন এক শাসত অহী যার সবকিছু সাধারণ মানুষের জ্ঞানের পরিধিতে আসেনা। এটি জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন স্বরূপ। আল-কোরআনের কোন খণ্ডিত অংশ পড়ে যেমন কোরআনকে বুঝা যায়না, ঠিক তেমনি শুধু বাংলা অনুবাদ পড়েও কোরআনের সব আয়াতের যথাযথ অর্থ খুব সহজে ধরা যায়না। এই অর্থে কোরআনকে অনেক কঠিন মনে হলেও আসলে তা নয়। কারণ আল্লাহ কখনো কোন কাঠিন্যের বোঝা তার বান্দাদের উপর চাপিয়ে দেননা। তাই কোরআনকে বুঝতে হলে আমাদেরকে পড়তে হবে। শিক্ষিত হতে হবে। তাই মহান আল্লাহ তা’লা প্রথম অহী পাঠান পড়ার ওপড় গুরুত্ব দিয়ে।
একজন নাস্তিক দাবীদার তথাকথিত ব্লগার, কোটি কোটি মুসলিমের ধর্মীয় বিশ্বাসে চরম আঘাত করেছেন। উলঙ্গ ভাবে ব্যাঙ্গ করতেও ছাড়েননি। চরমভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। কিছু বাহ্‌বাও কুড়িয়েছেন। কিছু চেলা বেশ ভালই জুটিয়েছেন। বেশ ভাল! আল্লাহ আপনাকে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন, আপনি তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে জ্ঞানের অপব্যবহার করে চলেছেন। আপনার জ্ঞান আছে একথা ঠিক, কিন্তু জ্ঞানের গতিপথ উল্টোমুখী। সেটা কিরকম?
পেথিডিন চিকিৎসা জগতের একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। ১৯৬০ সালে ডাঃ পল জনসেন প্রথম ইহা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহার করেন এবং তাই পেথিডিনের আবিষ্কারক হিসাবে ইতিহাসের পাতায় তার নামটি সোনালী হরফে লেখা হয়ে যায়। আপনার মতো আরেক মহাজ্ঞানী আরো একধাপ এগিয়ে আবিষ্কার করলেন পেথিডিন কে একটি নেশার উপকরণ হিসাবে। সেই মরণ নেশা আজ মানব জাতির জন্য অভিশাপ। দুই আবিষ্কারকই জ্ঞানী সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা, কিন্তু একজন জ্ঞান প্রয়োগ করেছেন মানব কল্যাণে আরেক জন প্রয়োগ করেছেন মানব জাতি ধ্বংসের কাজে।
ঠিক তেমনি ডিনামাইট আবিষ্কারও ছিল আলফ্রেড নোবেলের একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। মানব কল্যাণেই ডিনামাইটের আবিষ্কার। কিন্তু আপনার মতো আরেক মহাজ্ঞানী আবিষ্কার করলেন এটাকে কিভাবে বোমা হিসাবে ব্যবহার করে মানব জাতি তথা স্থাপনা ধ্বংসের মাধ্যমে যদ্ধ-বিগ্রহ সৃষ্টি করা যায়।
একজন ঘুষখোর সব সময় চিন্তা করে, গবেষনা করে- কিভাবে, কত সূক্ষ্মভাবে ঘুষ খেলে সে ধরা পড়বে না। একজন চোর সব সময় চিন্তা করে, গবেষনা করে- কোন প্রক্রিয়ায়, কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চুরি করলে সে ধরা পড়বে না। আর একজন ভাল মানুষ সব সময় চিন্তা করে, গবেষনায় ব্যস্ত থাকে কি করে মানব কল্যাণে ভূমিকা রাখা যায়। একজন মুমিন সবসময় গবেষনা করে কিভাবে নিজে ও সকল মুসলমানগণ দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি লাভ করবে।
ধর্ম প্রবর্তকের চেযেও আপনি মহাজ্ঞানী সেটা আপনি প্রমাণ করেছেন। খুব ভাল কথা। আমিও মেনে নিচ্ছি আপনি মহা জ্ঞানী। তাহলে আপনার কি উচিৎ ছিলনা, তাঁর চেয়েও আপনার ধর্মটা উৎকৃষ্ট এটা প্রমাণ করুন। তাঁর চেয়েও উৎকৃষ্ট কিছু করে দেখান। তাহলেই তো আপনার জ্ঞানের মহিমান্বিতা প্রকাশ পেত। কিন্তু আপনি তা না করে আপনার জ্ঞানকে সেই পেথিডিন বা ডিনামাইটের অপব্যবহারের মতো বিপরীতমুখী কাজে ব্যবহার করলেন। এই একটি কারণেই আপনি আপনার মনে জেগে উঠা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাননি। আপনার মতো মহাজ্ঞানী আর ঐ মহা জ্ঞানীর মধ্যে পার্থক্য কোথায়, যে মহাজ্ঞানী পেথিডিনকে নেশাকারক হিসাবে আবিষ্কার করেছে, যে মহাজ্ঞানী ডিনামাইটকে বোমা হিসাবে ব্যবহার করে কোটি কোটি মানুষের প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে? পার্থক্য কোথায় আপনার মাঝে আর ঐ ঘুষখোর বা চোরের মাঝে?
আমি বলবো এটি আপনার জ্ঞানের অধঃপতন। প্রথমে আপনি মানুষ থেকে কুকুর, এবং পরে পাগলা কুকরে রূপান্তরিত হয়ে গেছেন। এখন পাঠকদের কাছে আমার প্রশ্নঃ- কুকুর পাগলা হয়ে গেলে আপনি কি করবেন?
তাকে আদর সোহাগ করে, বাবারে সোনা’রে বলে বুঝিয়ে বলবেন- বাবারে মানুষকে কামড়াইওনা, এটা ভাল কাজ নয়।
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তাকে নানারকম যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিবেন- মানুষকে কামড়ানো ভাল কাজ নয়। নাকি -
তাকে মানবতার দোহাই দিয়ে মানবাধিকারের রেফারেন্স দিয়ে চিঠি লেখবেন- সে যেন মানুষকে আর না কামড়ায়।
কোনটি করবেন প্রিয় পাঠক?
কুকুর পাগলা হয়ে গেলে তার কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিস্কৃত হয়েছে কিনা আমার জানা নাই।
পাগলা কুকুরকে পাকড়াও কড়ার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের, এমন পরামর্শও আমাকে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান সিটি করপোরেশন এই কাজটি করবে বলে কি ঢাকাবাসী বিশ্বাস করেন? আর কখন করবেন এই ভরসায় আপনি কি বসে থাকবেন?
যেখানে সিটি করপোরেশন নাই সেখানে কি করবেন?
ধর্ম মানব জাতির মধ্যে সামাজিক শৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, আর আপনি সেই সামাজিক শৃঙ্খলাকে ভাঙতে আপনার জ্ঞানকে ব্যবহার করছেন। জ্ঞান তো আপনার আছে, কিন্তু জ্ঞানটাকে আপনি কি কাজে লাগাচ্ছেন সেটা নিয়ে ভাবতেও জ্ঞানটাকে একটু কাজে লাগান।
ইসলাম পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ মানবতার ধর্ম। বিশ্বে যতগুলো মানবাধিকার সংঘটন আছে, তারা ইসলামের গুটি কয়েক নীতি মেনে চলেছেন মাত্র। আরো অনেক মানবাধিকার নীতি শিক্ষা দেয় আমাদের আল কোরআন। ( এব্যাপারে কারো কোন সন্দেহ থাকলে মন্তব্যে লিখুন, আমি জবাব দিতে চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ। ) সেটা আমরা যারা উত্তরাধিকার সূত্রে মুসলিম তারা জানিনা। কারণ আমরা আমাদের ধর্মগ্রন্থগুলো ভালভাবে কখনো পড়িইনা। সেটাতো ধর্মের দোষ নয়। আমাদের দোষ, আমরা পড়িনা, শিখি না, মানিনা। আর গুটি কয়েক কাঠমোল্লাকে দিয়ে ইসলাম ধর্মকে বিচার করতে যাওয়ার মানে হচ্ছে, অপরিণত কোন চালককে দিয়ে গাড়ির মান যাচাই করার মতো।
প্রশ্ন থাকে, আপনার মৃত্যুর পর লাশ কোন ধর্ম মতে সৎকার করা হবে? হয়তো আপনি অতি সহজ একটি সমাধান দিয়ে দিবেন- লাশটি সৎকার করার কোন প্রয়োজন নাই। লাশটি কোন মেডিক্যালে দান করে যাবেন, ভবিষ্যত শিক্ষার্থীদের জন্য। বাহ্‌‌ কি সুন্দর সমাধান। কিন্তু আপনি এই গ্যারান্টি কি করে দেন যে মৃত্যুর পর মেডিক্যালে আপনার লাশটি কোন কাজে আসবে? এমনও তো হতে পারে আপনার মতো জ্ঞানীদের আবিষ্কার কোন বোমা আপনার লাশটির এমন দশা করল যে, কয়েকটি পোড়া মাংসের টুকরা ছাড়া আর কোন কিছুই অবশিষ্ট পাওয়া গেলো না। তখন মেডিক্যাল ঐ কয়েকটি পোড়া মাংসের টুকরা কি কাজে লাগাবে ? আবার এমনও তো হতে পারে মৃত্যু আপনাকে এমন এক জায়গায় টেনে নিয়ে গেল যে, আপনার লাশটি পড়ে থাকল কোন আগাড়ে-বাগাড়ে। শিয়াল, কুকুর আর শকুন টেনে ছিঁড়ে খাবে। কোন মেডিক্যালের এজেন্টের সাধ্যে কি কুলাবে আপনার লাশটির হদিস বের করা? আরো কত কিছুই তো ঘটতে পারে।
মনে আছে তো আপনাদের ঐসব তথা কথিত গুরু; আহমেদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদকে। তারা আজ কোথায়? আপনি কি জানেন তাদের লাশটি কি করা হয়েছে?
ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাস। বিশ্বাসে কোন যুক্তি প্রমাণের প্রয়োজন পড়েনা। তথাপি কোরআন একটি প্রমাণিত সত্য। যে বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে নাস্তিকতার সৃষ্টি সেই বিজ্ঞান কি প্রমাণিত সত্য? কিন্তু বিশ্বের সকল বিজ্ঞানীগণ এই কোরআনের তথ্য নিয়েই আবিষ্কারের নেশায় মেতে উঠেন। কারণ কোরআন জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন স্বরূপ। সেই বিজ্ঞানীরা কিন্তু আপনাদের মতো তথাকথিত নাস্তিক নন কেউই। কোরআনের বিভিন্ন তথ্য সব মিলিয়ে প্রায় ৮০% তথ্য এযাবৎ সত্য প্রমাণ করেছে বিজ্ঞানীগণ। কিন্তু ১% ও মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেনি। তার মানে হচ্ছে বাকি ২০% ও সত্য। চিন্তা করতে শুরু করুন এখনই।
আর হ্যা! আরেকটি কথা, আপনি নাস্তিক। আপনি যেহেতু আল্লাহ (যিনি আপনার কাছে অলীক), রাসুলুল্লাহ সাঃ ( যিনি ইতিহাসে বাস্তব ) কোনটাতেই আপনি বিশ্বাস করেন না, সেহেতু আপনার বাবাকে পরের বার বাবা ডাকার আগে ডিএনএ টেষ্ট করে নিতে ভুলে যাবেন না যেন। কেন খামোখা শুধু শুধু আপনার মায়ের কথার উপর আন্দাজে বিশ্বাস করে কোন এক পুরুষকে বাবা বলে ডেকে চলেছেন এতোদিন যাবৎ?



নাস্তিকতা এখন চরমপন্থার নাম

নাস্তিকতা এখন চরমপন্থার নাম

রহমাতুল্লাহ খন্দকার : নাস্তিকরা নিজেদেরকে মুক্তমনের অধিকারী, যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক, পরমতসহিষ্ণু, উদার ইত্যাদি গুণের অধিকারী বলে দাবি করে থাকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় নাস্তিকরা চরমভাবে আত্মকেন্দ্রিক, হতাশ, সংশয়বাদী, পরমত বিদ্বেষী ও প্রতিক্রিয়াশীল। তারা কোনোভাবেই ভিন্নমতকে সহ্য করতে পারে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চরমপন্থা গোঁড়া ধর্মীয় মৌলবাদী চরমপন্থিদেরকেও হার মানায়। এর বাস্তব উদাহরণ হলো বর্তমান শাহবাগী নাস্তিক ব্লগারদের চরমপন্থি কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ কোনোদিনই বামধারার রাজনীতি বন্ধের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি। কিন্তু বাম রাজনীতিবিদরা সবসময়ই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের পাঁয়তারা করেছে। শাহবাগীরা প্রথমে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে রাজপথে নেমে এলেও শেষ পর্যন্ত তা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ এবং এর সাথে জড়িত সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবিকে মুখ্য করে তোলে এবং ভিন্নমতাবলম্বীদেরকে দেশছাড়া করার মতো জাতিদ্রোহী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ে। শাহবাগীরা শুধু মানবতাবিরোধীদের বিচার নয়; বরং সকল ইসলামী ব্যক্তিত্বকে নির্মূলের ষড়যন্ত্রে উঠেপড়ে লাগে। তারা সহিংস শ্লোগানের মাধ্যমে  দেশব্যাপী সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দেয়। তারা কোমলমতি শিশু-কিশোরদেরকে জবাই করার মন্ত্র শেখায়। তাদের প্রতিটি কথা ও কাজ চরমপন্থাকে এমনভাবে উস্কে দেয় যে বিগত কয়েক দিনেই বাংলাদেশে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়। তাদের চরমপন্থি আন্দোলনের কারণেই দেশে সাম্প্রতিক গণহত্যা, মসজিদ তালাবদ্ধ করা, দেশের বিভিন্নস্থানে ১৪৪ ধারাসহ রাজধানীতে অঘোষিত কারফিউ জারি করা থেকে শুর” করে সংখ্যালঘুদের প্রতি আক্রমণের মতো ঘটনাও ঘটে যায়।
বাংলাদেশে নাস্তিকদের দুটি রূপ দেখা যায়। শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে একটি গ্র”প রয়েছে যারা ব্যক্তিগতভাবে নাস্তিকতা অনুশীলন করে। তারা নিজেদের নাস্তিক হিসেবে ঘোষণা দিতে লজ্জাবোধ করে না। আর একটি গ্র”প রয়েছে রাজনীতির ক্ষেত্রে তারা নাস্তিকতা চর্চা করে কিন্তু জনগণের ভোটের আশায় নিজেদের নাস্তিকতা প্রকাশ করে না। এরাই মুনাফিক। এরা অন্তরে নাস্তিকতা পুষে মুখে নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে দাবি করে। এরা ইসলামের জন্য খুবই ক্ষতির কারণ। এরূপ নাস্তিকরাই বর্তমানে শাহবাগে জমায়েত হয়েছে। তারা ব্লগ, মিডিয়া, সংবাদপত্র এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করেও দেশের অধিকাংশ মানুষের ঈমান হরণ করতে পারেনি। তাই তারা এখন চরমপন্থা বেছে নিয়েছে। সাধারণ ঈমানদারদেরকে হত্যা করে দেশে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে আইন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার খেলায় মেতে উঠেছে। ইতিহাসের দিকে তাকালে নাস্তিকদের এরূপ চরমপন্থার হাজারো প্রমাণ হাজির করা যাবে।
নাস্তিকরা বলে বেড়ায় যে, গোঁড়া ধার্মিকরা নাকি অনেক বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। এটা ইতিহাস না জানার ফল। এককালে খৃস্টান চার্চ বিজ্ঞানীদের হত্যা করে কিন্তু ইসলাম বিজ্ঞানের জ্ঞানকে বিকশিত করে। কিন্তু নাস্তিকরাই ধার্মিক বিজ্ঞানীদেরকে বয়কট করছে, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে এবং তাদেরকে ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে। এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে টিউলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্ববিখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিদ জে. টিপলারের ওপর তাদের জঘন্য আচরণের কথা। ধর্ম সম্পর্কে টিপলারের সাহসী উচ্চারণের ফলে নাস্তিকরা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। জ্যোতিঃপদার্থের ওপর বক্তব্য রাখার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মিউনিখ-এর ম্যাক্স প্ল্যাংল্ক ইনস্টিটিউটের এক সেমিনারে। কিন্তু তার ‘দি ফিজিক্স অব ইমমর্টালিটি’ গ্রন্থটি প্রকাশের পর তারা সে আমন্ত্রণ বাতিল করেছিল। এ হলো নাস্তিকদের সৌজন্যবোধ ও ভদ্রতা! তারা স্বাধীন মতপ্রকাশের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে তাদের কর্মকাণ্ড মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারকে খর্ব করছে।
টিপলার যখন জ্যোতিঃপদার্থবিদ হিসেবে ক্যারিয়ার শুর” করেন তখন ছিলেন কট্টর নাস্তিক। তাকে দিয়ে ধর্মতত্ত্বের মূল দাবিগুলোর সত্যতা প্রমাণিত হবে, এ কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। অথচ বাস্তবে তাই দেখা গেল তার ‘দি ফিজিক্স অব ইমমর্টালিটি’ গ্রন্থে। তিনি বললেন, ‘বিজ্ঞানীদের এখন বাতিল ঈশ্বর-বিশ্বাস নিয়ে পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে। এখন সময় এসেছে ধর্মতত্ত্ব¡কে পদার্থবিদ্যায় অন্তর্ভুক্ত করার।’ তিনি ‘ওমেগা পয়েন্টে’ স্বীকার করলেন, ‘স্বর্গ আছে, আছেন আল্লাহ’।

অতীতে আইন করে ধর্মপালনে বাধ্য করার কথা শোনা গেলেও বর্তমানে দেখা যাচ্ছে তার বিপরীত অবস্থা। বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ধ্বজাধারীরা আইন করে রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মপালনে বাধা সৃষ্টি করছে। ধর্মের নামে যেমন কারো স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারকে ক্ষুণœ করা যায় না, তেমনি বিজ্ঞানের নামেও কারো ধর্মবিশ্বাস নিয়ে ভ্রƒকুটি করা উচিত নয়। কিন্তু নাস্তিকরা পরিকল্পিতভাবে ধর্মের বির”দ্ধে যুদ্ধে নেমেছে? তারা যুক্তি দিয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে ধর্মের কাছে হেরে গেছে, ফলে বিকল্প উপায়ে আইন করে ধর্মকে নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছে। তারা ধর্মের বির”দ্ধে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে, কিন্তু বিজ্ঞানই মানুষকে আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপনের যৌক্তিক উপাদান সরবরাহ করছে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার ও  উন্নতির ফলে ধর্মের অনেক জটিল বিষয় এখন মানুষের বোধগম্য হচ্ছে, উপযুক্ত জ্ঞানের অভাবে যা এতোদিন সবার বোধগম্য ছিল না।
সমাজতন্ত্র হলো নাস্তিকতার সামাজিক ফল। মার্কস, এ্যঙ্গেলস ও লেনিনসহ কমিউনিস্ট শাসকরা নাস্তিকতাকে মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তারা সবাই ধর্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করে নিরীশ্বরবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। এ লক্ষ্য হাসিলের জন্য তারা সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং আর কোনো নতুন কৌশল না পেয়ে বিশ্বাসীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন ও গণহত্যা চালিয়েছিলেন। মসজিদ-মাদ্রাসা বন্ধ করে দিয়েছিল।
লেনিন সমাজতন্ত্রের ঝাণ্ডা নিয়ে ধর্মকে নির্মূলে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। তিনি পৃথিবীকে স্বর্গ বানাতে ও ধর্মকে নির্বাসনে পাঠাতে প্রাণপণ সংগ্রাম করেছিল। কিন্তু তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। প্রমাণিত হয়েছিল যে, পৃথিবীতে তারাই স্বর্গ রচনা করতে পারে যারা আকাশমার্গে স্বর্গ রচনা করতে চায়। যারা আকাশমার্গে স্বর্গ রচনা করতে চায় না, তারা শুধু পৃথিবীতে নরকই রচনা করে। লেনিনের ফাঁকাবুলিতে পৃথিবীতে স্বর্গ রচিত হয়নি, বরং আশ্চর্যজনকভাবে সমাজতন্ত্রের পতন ঘটেছিল। এ পতনের প্রধান কারণ ছিল ‘বিশ্বাসের সংকট’। এ প্রসঙ্গে প্যাট্রিক গ্লাইন লিখেছেন, কমিউনিজমের পতনের কারণগুলো খুঁজতে গেলে ঐতিহাসিকদের কাছে এটা আরো স্পষ্ট হবে যে, সোভিয়েত অভিজাতশ্রেণী নিরীশ্বরবাদী ‘বিশ্বাসের সংকটে’ ভুগছিল। একটি নিরীশ্বরবাদী আদর্শের অধীনে বাস করে, যে আদর্শ অনেকগুলো মিথ্যার ওপরে এবং ওই মিথ্যাগুলো একটি ‘বড়’ মিথ্যার ওপরে ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত ছিলÑ সোভিয়েত সমাজব্যবস্থা সকল অর্থেই নীতিভ্রষ্টতা ও আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগছিল। দেশটির জনগণ-শাসকগোষ্ঠীসহ হারিয়ে বসেছিল সব ধরনের নীতি-নৈতিকতার ধারণা এবং আশা।
অতীতে বিভিন্ন দেশ ও সমাজে ধর্মীয় চেতনা বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার যাঁতাকলে ধর্মীয় চিন্তা-চেতনাকে নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও এই চেতনাকে সাময়িকভাবে দমিয়ে রাখা গেলেও একেবারে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। খোদ রাশিয়াতে ধর্মবিরোধী অভিযান ব্যাপকভাবে পরিচালনা করা সত্ত্বেও মানুষের মনে ধর্মীয় চেতনা প্রবল হয়েছিল। এ কারণে সমাজতান্ত্রিক কর্তৃপক্ষ রীতিমত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা ধর্মপালনের অনুমতি দিয়েছিল। এটা আরো স্পষ্ট হয়েছিল মিখাইল গর্বাচেভের সংস্কার কর্মসূচিতে। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি নৈতিক সংস্কার কর্মসূচিও গ্রহণ করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন যে, মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট শব্দমালা ব্যবহার করে জনগণকে আকৃষ্ট করতে পারছেন না। তাই তিনি ধার্মিক না হয়েও জনগণকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ভাষণে স্রষ্টার নাম উল্লেখ করতে শুর” করেছিলেন। বর্তমানে কমুনিস্ট চীনেও এই নীতি অনুসৃত হচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়কে সরকারিভাবেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
তুরস্কে ইসলামী সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে ধ্বংস করার জন্য কামাল আতাতুর্ক ঐতিহ্যবাহী খেলাফত ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে ধর্মহীনতার মোড়কে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রবর্তন করেছিল। নিজের খায়েশ পূরণের জন্য মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বিচারের নাটক মঞ্চস্থ করে প্রতিপক্ষের অসংখ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ইসলামী চিন্তাবিদকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছিল। অনেককে নিষিদ্ধও করা হয়েছিল। জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সামরিক জান্তার হাতে প্রদান করা হয়েছিল। ইসলামী রাজনীতিকে ঠেকাতে গিয়ে কামাল আতাতুর্ক মানুষের প্রার্থনার ভাষা কেড়ে নিয়েছিল। তার সময় থেকে ও পরবর্তী দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তুরস্কে আরবি ভাষায় কুরআন পড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নামাজে কুরআন অনুবাদ করে পড়া হত। সেসময় নামাজকে বলা হত ‘ফাইভ টাইমস অব প্রেয়ার্স’, আজানকে বলা হত ‘কল ফর প্রেয়ার’। শুধু আরবিতে আজান দেয়ার অনুমতি দানের জন্য সাবেক এক তুর্কি প্রধানমন্ত্রীকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছিল। ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়েব এরদুগানকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। তখন তিনি আঙ্কারার মেয়র ছিলেন।
নাস্তিকরা এতোই অসহিষ্ণু যে, অন্য মতকে তারা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারে না। যুক্তির দৌড়ে হেরে গেলে পরমত দমনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালায়। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তার ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ গ্রন্থে যখন বললেন, আল্লাহ আমাদের মতো প্রাণী সৃষ্টি করবেন বলেই তিনি মহাবিশ্বকে এমন করে সাজিয়েছেন। তার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নাস্তিকরা প্রতিবাদ করলেন এ বলে যে, ‘তারা বিজ্ঞানী হলেও মাঝে-মধ্যে অন্ধ-বিশ্বাসে নতজানু।’ আইনস্টাইনের ঈমান নিয়েও কথা তুলেছিল তারা। আজো তার লেখার বিভিন্ন ফাঁক-ফোকর দিয়ে নাস্তিকতার দলিল খোঁজার চেষ্টা করা হয়। ডারউইনের বিবর্তনবাদকে টেনেটুনে নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রকৃতপক্ষে চার্লস ডারউইন একজন ‘ক্রিয়েটারে’ (স্রষ্টায়) বিশ্বাস করতেন।
নাস্তিকদের দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে অনেক বিজ্ঞানী ঈমানকে গোপন রাখতে হয়েছিল কিন্তু জীবন সায়াহ্নে এসে আল্লাহর অস্তিত্বকে মেনে নিয়েছেন এবং জীবনের সব কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা ও দুঃখ প্রকাশ করছেন। ইংল্যান্ডের এমনি একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ‘রোমানেস’। তিনি মৃত্যুর আগে স্বীকার করে গেছেন যে, তার বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক চিন্তাধারা মূলত ভুলের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর অস্তিত্বকে মেনে নেয়া ছাড়া এ মহাবিশ্বকে কোনোভাবেই বুঝানো যায় না।’
প্রখ্যাত ইংরেজ রসায়নবিদ ও পদার্থবিদ মাইকেল ফ্যারাডে এক্ষেত্রে আরো একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি সারা জীবন নিজস্ব থিউরি নিয়ে কাজ করেছেন এবং সৃষ্টি সম্পর্কে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অথচ কোনো এক সহকর্মী তাকে মৃত্যুশয্যায় যখন প্রশ্ন করলেন, ‘ফ্যারাডে’ এখন আপনার ধারণা কি? মৃত্যুপথযাত্রী প্রশ্নটি পুনরাবৃত্তি করলেন, ‘ধারণা’? না আমার কোনো ধারণা নেই। আল্লাহকে ধন্যবাদ আমাকে আর কোনো ধারণার উপর নির্ভর করতে হবে না। আমি জানতে পেরেছি যাকে বিশ্বাস করতাম। জানতে পেরেছি, আমি যা কিছু করেছি তিনি তা সংরক্ষণ করবেন। এমনিভাবে উল্লেখ করা যায় অসংখ্য বিজ্ঞানীর কথা, যারা আল্লাহর প্রতি অত্যন্ত বিনয়ী। অন্ধবিশ্বাস নয়, বংশ-সূত্রে নয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণাই তাদেরকে এ পথে নিয়ে এসেছে।
নাস্তিকরা নিজেকে যুক্তিবাদী বলে দাবি করলেও আসলে তারা তা নয়; বরং তারা সংশয়বাদী ও হতাশাবাদী। নাস্তিকতার পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এ প্রসঙ্গে সহস্রাধিক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের রচয়িতা বিশ্বের অন্যতম ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আনড্রু কনওয়ে আই. ভি. বলেন, ‘আল্লাহ নেই’Ñ এ প্রকল্পকে প্রমাণ করা যায় না। নাস্তিকরা আল্লাহকে অস্বীকার করেছেন, কিন্তু তাদের অস্বীকারের পক্ষে কোনো যুক্তি পেশ করতে পারেননি। এমনকি আল্লাহর অনস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো গুর”ত্বপূর্ণ আলোচনাও আমার নজরে পড়েনি। কিন্তু আল্লাহর অস্তিত্বের পক্ষে অনেক যুক্তিসমৃদ্ধ ও তথ্যনির্ভর রচনা আমি পড়েছি এবং তা নিয়ে গবেষণা করেছি। আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপনের কারণে মানুষের কল্যাণ এবং তাকে অস্বীকার করার কারণে মানুষের অকল্যাণ আমি প্রত্যক্ষ করেছি। অতএব বিজ্ঞানকে নাস্তিকতার পক্ষে ব্যবহার করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং আধুনিক বিজ্ঞানের নিত্যনতুন গবেষণা ও তথ্যানুসন্ধান আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণকেই সুদৃঢ় করছে।
নাস্তিকদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে ডঃ মরিস বুকাইলি বলেন, বস্তুত, সব যুগে সব দেশেই ‘অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী’ ধরনের লোক থাকে। ‘জ্ঞানপাপী’ বা ‘পণ্ডিতমূর্খ’ বলে পরিচিত লোকদেরকেও সমাজে সদম্ভে বিচরণ করতে দেখা যায়। কিন্তু মুষ্টিমেয়সংখ্যক ওই ধরনের লোক যাই বলুন বা যাই ভাবুন, আধুনিক যুগের তথ্য-উপাত্ত গবেষণা ও বিশ্লেষণ নিঃসন্দেহে এমন যুক্তিপ্রমাণই প্রদান করছে, যা মানুষকে অবিশ্বাসী করা তো দূরে থাক বরং আল্লাহর প্রতি অধিকতর বিশ্বাসী হওয়ারই শিক্ষা দিচ্ছে। এটি আরো বেশি সম্ভব হয়েছে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের নব নব গবেষণা ও আবিষ্কারের দর”ন।
নাস্তিকরা শত জুলুম ও নির্যাতন দিয়ে কোনোকালেই ধর্মীয় চেতনাকে মুছে দিতে পারেনি। কেননা, প্রত্যেক মানুষ ধর্মীয় চেতনা (ফিতরাত) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ইসলামের এই অমোঘ বাণীর সঙ্গে পাশ্চাত্যের মনস্তত্ত্ববিদরাও একমত হয়ে স্বীকার করেছেন যে, ধর্মীয় চেতনা মানবাত্মার ‘চতুর্থ দিগন্ত’।, মানবদেহের যেমন চারটি দিগন্ত রয়েছে : দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গভীরতা ও গতি, তেমনি মানবমনেরও রয়েছে তিনটি স্বভাবগত প্রবণতা : যৌনতা, মান-সম্মান ও ধন-সম্পত্তি লাভের বাসনা এবং ধর্মীয় চেতনাবোধ।’ মানুষের মনে ধর্মবিশ্বাস কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি হয়নি, তা পুরোহিতদের বানানোও নয়, বরং তা হলো মানুষের স্বভাবগত বিষয়। ফলে কোনোদিনই ধর্মীয় চেতনাকে নির্মূল করা সম্ভব নয়।